About

‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদলের জন্মকথা ’

মুক্ত রোভার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। পরবর্তীতে সংগঠনটি সংগঠক এর অভাবে ধওে রাখা সম্ভব হয়নি। অনেক চড়াই উৎরাই এর মাঝে মোঃ মোসফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ২৮ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল ( রোভার ক্রু ও স্কাউটদের নিযে একটি র্পূণাঙ্গ ইউনিট)।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৮ সালের ২৮ জুন মোসফিকুর রহমানের প্রচেষ্টায় ৩জন কিশোরের সহযোগিতায় গঠিত হয় এম. হোসেন ফুটবল টুর্ণামেন্ট কেন্দ্রিক একটি সংগঠন। নবীন সংঘ সময়ের প্রয়োজনে স্বাধীনতার পর জাগরণী সংঘ ও নবীন সংঘ একত্রিকরণ করে পূর্ণগঠিত হয় নবীন সংঘ। সংগঠনটির নিজের কার্যক্রমে গতি আনার তাগিদে ১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে স্কাউটিং সংযোজন করে নামকরণ হয় নবীন সংঘ মুক্তমহাদল। রাজশাহী অঞ্চল ও রোভার অঞ্চলের সাথে রেজিস্ট্রিভুক্ত হয় নবীন সংঘ মুক্তমহাদল। সংগঠনটি স্কাউটিং শাখায় গতি সঞ্চারের মধ্য দিয়ে নবীন সংঘ ফুটবল সেবীদেও সাথে বিরোধের কারণে ১৯৭৫ সালের ২৮ জুন স্কাউটিং এর তাগিদে সংগঠন সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মোসফিকুর রহমানের নেতৃত্বে স্কাউট দরদীদের নিয়ে আলাদা করে সংগঠন হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্কাউটদের দ্বারা জুতো কালি করে সংগৃহিত ও মোসফিকুর রহমানের নিজের দেয়া অর্থে অত্যন- কষ্টসাধ্যভাবে পরিচালিত হয় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। খোলা মাঠে জন্ম লাভের পর মাত্র দশ টাকা ভায়ায় স'ানীয় স্কাউটস ভবনের সিঁড়ি ঘরে ও পরে পঁচিশ টাকা ভাড়ায় একটি রুমে মুক্তমহাদল স'ানান-রিত হয়। অত্যন- ধৈর্য ও ক্লানি-হীন পরিশ্রমে এবং প্রশাসনিক সহায়তায় মুক্তমহাদল নবাবগঞ্জ ক্লাব কর্তৃক প্রাপ্ত একখণ্ড জমিতে নিজস্ব ভবন গড়ে তোলে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করে।

উল্লেখ্য, প্রতিটি থানায় স্কাউট কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে শিবগঞ্জ থানার রানীহাটিতে, গোমস-াপুর থানার রহনপুরে এবং নাচোল থানা সদরে মুক্তমহাদলের শাখা গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরে ‘ চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল’ চারতলা ভবনে ও রহনপুর মুক্তমহাদল একতলা ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মুক্তমহাদল কি ? স'ানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কাউট দরদী, জনসেবীদের নিয়ে প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত শিশু কিশোর যুবদের জন্য সেবামূলক স্কাউট কেন্দ্রিক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল।

মুক্তমহাদলের আদর্শ ঃ

(ক) চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল একটি নিরপেক্ষ স্বেচ্ছাধর্মী সেবামূলক ও অরাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

(খ) স্কাউট আন্দোলনে বিশ্ব স্কাউট সংস'ার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের স্কাউটিং এর আদর্শ ও স্বীকৃত পদ্ধতিতে ও স'ানীয় চাহিদা অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদলের কার্যক্রম পরিচালিত।

(গ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদলের প্রশিক্ষণ ও প্রোগ্রাম অসামপ্রদায়িক, শ্রেণী বৈষম্যহীন ও উদার ধর্মীয় চেতনার উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

(ঘ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদলের সদস্যগণ কোন রাজনৈতিক, সামপ্রদায়িক, মতবিরোধ কোন পক্ষ সমর্থন করেনা।

লক্ষ্য ঃ এই প্রতিষ্ঠান আদর্শেও অনুসৃত নিয়মে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিশু-কিশোর, কিশোরী ও যুবদের বিশ্বাসী, সৎ, চরিত্রবান, আদর্ম ও সাংস্কৃতিবান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।

কার্যক্রম ঃ সিলেবাস ভিত্তিক স্কাউট কার্যক্রম, স'ানীয় শিশু-কিশোর-যুবকদের পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিশু পাঠাগার, খেলাধূলা, সংগীত বিষয়ক ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা।

কার্যালয় ঃ ১৯৭৫ সাল থেকে বহু দুঃখ-দুর্দশার পর জনাব মোঃ খাইরুল আলম , মহকুমা প্রশাসক ও সভাপতি, নবাবগঞ্জ ক্লাব এর আন-রিক সহযোগিতায় নবাবগঞ্জ ক্লাব ১৯৮৪ সালে মুক্তমহাদলকে ভবন নির্মাণের জন্য একখণ্ড জমিদান করে। ঐ সালের ২ ডিসেম্বর ভিত্তিপ্রস-র স'াপনের মাধ্যমে জনাব মোঃ আব্দুস সালাম খান, (সাবেক সংস'াপন সচিব ও বর্তমান জাতীয় কমিশনার (স্পেশাল ইভেন্টস) বাংলাদেশ স্কাউটস) তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর সহযোগিতায় সেই জমির উপর মুক্তমহাদলের নীচতলা ভবন নির্মিত হয়। জনাব মোঃ খাইরুল আলম ও জনাব মোঃ আব্দুস সালাম খান -এর এই মহানুভবতার কথা মুক্তমহাদলের শিশু-কিশোর ও যুবকসহ অন্যান্য সকলে চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। পরবর্তী চীফ পেট্রন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ নুরুজ্জামান মিয়ার সহায়তায় ও ডেপুটি চীফ পেট্রন পুলিশ সুপার জনাব জিয়াউদ্দীন আহম্মদ সাহেবের উৎসাহে দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্‌ হয়। পরবর্তীতে চীফ পেট্রন ও জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ সাজ্জাদ হোসেন সাহেবের অনুপ্রেরণায় পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব মোঃ এরশাদ খান নবাবগঞ্জ পৌরসভার তহবিল হতে তৃতীয় তলার মিলনায়তন নির্মাণ কাজে সহায়তা প্রদান করে। যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদলকে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছে। এছাড়াও এ কাজে প্রতিষ্ঠাতাকে আর্থিক যোগান দিতে হয়েছে। আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল চারতলা ভবনে সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।

স'ানীয় কর্মকাণ্ড ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল জেলার বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ডায়াবেটিক সমিতির বিশেষ চিকিৎসা শিবির, মুক্তমহাদল ভবনে প্রতিষ্ঠালগ্নে জেলা অন্ধকল্যাণ সমিতির কার্যক্রম, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস'ার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মুক্তমহাদল ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা ও দলীয় স্কাউটদেও সক্রিয় সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে বার্সিক ক্রীড়ানুষ্ঠান পরিচালনা, গ্রীনভিউ স্কুলের জন্য রেজিষ্ট্রি অফিস ও বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান আদায়ে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপন কাজে অংশগ্রহণ, ম্যাংগো ট্রাষ্টের সৃষ্টিলগ্ন থেকে বহু বছর আদায় কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ, অন্ধ কল্যাণ শিবির, পরিস্কার- পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ট্রাফিক সপ্তাহ, রাস-া-ঘাট মেরামত ও বন্যার্তদের সাহায্য প্রভৃতি কাজে এবং বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দলের স্কাউটরা অংশ নিয়ে থাকে। শিশু একাডেমীর জাতীয় শিশু পুরস্কার ও মৌসুমী শিশু প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান মেলা ও গ্রন' মেলা ইত্যাদিতে নিয়মিতভাবে অংশ নিয়ে থাকে। উল্লেখ্য, ১৯৯২, ১৯৯৫, ১৯৯৬ সালে কাব স্কাউটিং সফল পরিচালনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিশু সংগঠন হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদলকে পুরস্কার প্রদান করে। দুঃস' শিশু ও কিশোরদের সেবার জন্য মুক্তমহাদলের “ শিশুসেবা প্রকল্প” চালু রয়েছে। সাথে সাথে কাব, স্কাউট ও রোভারদের জন্য ১৯৯৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল শিশু পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছে। ঐতিহ্যবাহী হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ অনুষ্ঠানমালায় স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করে সূধী সমাজের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছে।

প্রকাশনা ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল স্কাউটিং কার্যক্রমকে সকলের ঘওে ঘরে পৌঁছে দেবার প্রয়াসে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দিবস, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও স'ানীয় প্রয়োজনে সময়ে সময়ে মহাদল, মহানন্দা, মুক্তমহাদল, মুক্তকণ্ঠ ইত্যাদি নামে মোট ৩২ টি স্মরণিকা ও বুলেটিন প্রকাশ করেছে ও প্রতিবছর করবার পরিকল্পনা রয়েছে।

টেলিভিশন ও বেতার ঃ মুক্তমহাদলের কাব স্কাউটরা বাংলাদেশ স্কাউটস এর তত্বাবধানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা ও জারীগান বাংলাদেশ টেলিভিশনে পরিবেশন করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী বেতারে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে। উল্লেখ্য, অত্র জেলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সফলতার সাথে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে জেলাবাসীর মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।

উল্লেখিত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দলের শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অবিরাম প্রয়াস চালানো হচ্ছে। যাঁদের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে ড. নুরুল কাদির (রোজ) উপ-সচিব, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফানিসুর রহমান (জাতিসংঘ মিশন প্রধান, কঙ্গো), মোঃ জহিরুল ইসলাম (জুনিয়র কম্পিউটার প্রোগ্রামার, বর্তমানে কানাডা প্রবাসী), এ্যডভোকেট আবু বাক্কার (আয়কর উপদেষ্টা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ), প্রকৌশলী আলতাফুল আমিন (সহযোগী অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজী, জাপান, বর্তমানে জাপান প্রবাসী), মোঃ আলতাফ-উল-আলম (সিনিয়র সহকারী সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায়), মোঃ জাকিউল হক (এফইএ বিশেষজ্ঞ, আমেরিকা), মোঃ সাইফুল ইসলাম (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া), শিক্ষাবিদ ড. মাযহারুল ইসলাম তরু (সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ), প্রকৌশলী এ.কে.এম. পারভেজ ইকবাল (সহকারী অধ্যাপক, পুর্ত্রা ইউনিভাসিটি মালয়েশিয়া), মোঃ আনোয়ার হোসেন (সেলস্‌ ডিরেক্টর, গ্রামীনফোন), মোঃ আহসানুল আম্বিয়া সোহেল (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বর্তমানে ইংল্যাণ্ডে), প্রকৌশলী এ.কে.এম. আসিফ ইকবাল পার্থ (ক্যাপ্টেন, বিমান বাহিনী, যশোর, বর্তমানে জাপান), সুমন (সাইপ্রাস), ব্যাংকার গোলাম সালেকিন (এক্সিকিউটিভ অফিসার, এক্সিম ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা), ওমর শরীফ শাওন (মার্কেটিং অফিসার, এশিয়া কোম্পানী), হাসান শরীফ (বর্তমানে লন্ডণে), ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ, শেখ মেহেদী মোহাম্মদ (সহকারী পরিচালক, আর.ডি.এ. বগুড়া, বর্তমান ইংল্যাণ্ড), শেখ শাহরিয়ার মোহাম্মদ (সহকারী পরিচালক, আর.ডি.এ. বগুড়া), এছাড়া মোঃ শহিদুল হুদা অলোক (জেলা প্রতিনিধি, এনটিভি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ), নাসিম মাহমুদ (জেলা প্রতিনিধি, এটিএন বাংলা ও ইউএনবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সহ অনেকে।

প্রতিষ্ঠাতা

‘সুন্দর পৃথিবীর জন্য স্কাউটিং’, “পৃথিবীকে যেমন পেয়েছো তার চেয়ে একটু শ্রেষ্ঠতর করে রেখে যেতে চেষ্টা করো”- এ ধরনের মহান বাণী আমাদের আদর্শ মানুষ হতে অনুপ্রেরণা যোগায়। পৃথিবীতে অনেক মহামানব স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁদের মহানকর্মের জন্য। এমনই একজন ব্যক্তিত্ব সবার অনুকরণীয় আদর্শ রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল। সংক্ষেপে বি.পি। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে এই নাম। স্কাউটস আন্দোলনের জনক বি.পি-র আদর্শে অনুপ্রাণিত স্কাউটরা সবার ভালোবাসা পায়, কারণ তারা কাজ করে সমাজের মঙ্গলের জন্য নিঃসার্থভাবে । এই স্কাউটদের গড়ার কাজে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশে অতিপরিচিত একটি নাম মোসফিকুর রহমান। আর এই নামের সঙ্গে অবশ্যম্ভাবী একটি প্রতিষ্ঠানের নাম এসে পড়ে, তা হচ্ছে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল’। এই দুটি নাম যেন পরিপূরক। একজন মানুষ একটি সংগঠনের জন্য কত বেশি ত্যাগী হতে পারে তার দৃষ্টান- মোসফিকুর রহমান।একটি প্রতিষ্ঠানকে সন-ানবৎ মানুষ করে তিনি আজ বাংলাদেশ স্কাউটস এ একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশ স্কাউটস এর সাথে জড়িত এমন কোন ব্যক্তি নেই যিনি মোসফিকুর রহমানকে চেনেন না, জানেন না চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদলের কথা।

জন্ম ঃ কৃতী স্কাউটার, সংগঠক মোসফিকুর রহমানের জন্ম আম, কাঁসা-পিতল, লাক্ষার জন্য বিখ্যাত, গম্ভীরা, আলকাপ মেয়েলী গীতের মতো অনন্য লোকসংস্কৃতির লীলাভূমি হযরত শাহ্‌ নেয়ামতুল্লা (রহঃ) র পুণ্যস্মৃতিধন্য বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের স্মৃতিময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বর্ধিষু মহল্লা হুজরাপুরে ১৯৫৭ সালের ১৪ই জানুয়ারি। তাঁর পিতা রেজাউর রহমান, মাতা ফাতেমা বেগম। পিতা-মাতার ছয় সন-ানের মধ্যে মোসফিকুর রহমান সর্বকনিষ্ঠ। তাঁর অন্যান্য ভাই-বোনেরা হলেন মোসাঃ মনওয়ারা বেগম, মোঃ ওবায়দুর রহমান (সফল স্কাউট), মোঃ মজিবুর রহমান (সফল স্কাউট), মোসাঃ রওশন আরা বেগম (সফল গার্লস-গাইড) ও মোসাঃ দিলারা বেগম (সফল গার্লস-গাইড)। পিতা মাতার সর্বকনিষ্ঠ সন-ান হওয়ায় অন্যান্যদের চেয়ে তিনি বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতেন। আর তাই লেখাপড়ার প্রতি তাঁর কিছুটা উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। তবে ছোটবেলা থেকেই সমাজসেবার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল লক্ষ্যনীয়।

পারিবারিক জীবন ঃ
একজন সংগঠক হিসেবে মোসফিকুর রহমানের সাফল্য যেমন ঈর্ষণীয় তেমনি পারিবারিক জীবনেও তিনি একজন সফল অভিভাবক। যদিও মুক্তমহাদলকে নিয়েই তিনি সারাজীবন কাটিয়ে দেবেন, আবদ্ধ হবেন না কোন বন্ধনে - এই ছিল তাঁর জীবনের লক্ষ্য। কিন' তবুও পারিবারিক চাপ উপেক্ষা করতে না পেরে ১৯৮৪ সালের ৩০ মার্চ তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে করেন স্কাউট পরিবারে। মোঃ ইয়াসিন আলী পেশায় শিক্ষক, নেশায় স্কাউট। নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের এই খ্যাতিমান স্কাউটারের বড় মেয়ে উম্মে কুলসুমের সঙ্গে এক শুভক্ষণে তাঁর বিবাহ হয়। স্কাউট পরিবারের মেয়ে হওযায় সংগঠক মোসফিকুর রহমানের সাংগঠনিক তৎপরতাকে তিনি কখনই বিরূপভাবে দেখেননি। আর তাই তাদের সংসার জীবন হয়েছে সুখময়। মোসফিকুর রহমান ৩ পুত্র সন-ানের জনক। বড় ছেলে রায়হানুর রহমান পাওয়েল (স্কাউটিং এর জনক ব্যাডেন পাওয়েলের নামানুসারে ডাক নাম রাখা হয়েছে) এবং তিন জনের নামেই প্রথম ‘প’ অক্ষর রয়েছে। বড়ছেলে পাওয়েল বর্তমানে রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাষ্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। পাওয়েল স্কাউটিং এর সাথে ইউনিট লিডার বেসিক কোর্সও সম্পন্ন করেছে। মেজো ছেলে রেজওয়ানুর রহমান প্রতিম বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। সে থাইল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত ২০তম বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরী, মৌচাক গাজীপুরে অনুষ্ঠিত ৭ম বাংলাদেশ ৪র্থ সার্ক স্কাউট জাম্বুরী ও ১ম জাতীয় সৃজনী স্কাউট ক্যাম্পসহ একাধিক স্কাউট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে এবং বয়স ভিত্তিক টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে ব্‌্েরাঞ্জ ও রৌপ্য পদক অর্জন করেছে। ছোট ছেলে রাশিদুর রহমান প্রসন্ন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। সেও ৬ষ্ঠ জাতীয় কাব ক্যাম্পুরী, ৪র্থ জাতীয় কমডেকা ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টেনারী কমডেকাসহ একাধিক স্কাউট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। এক কথায় ছেলেদেরও স্কাউটিং জগতে পদচারণা করিয়ে সুষ্ঠুভাবে মানুষ করছেন তিনি। একজন সফল সংগঠকই পারেন নতুন জগত সৃষ্টি করতে। স্কাউটিং এর জগত এক সমৃদ্ধির জগত, সুন্দর শানি-ময় পৃথিবী গড়ার জগত। এ পথে পদচারণা করা অত্যন- কষ্টসাধ্য, পদে পদে যার প্রতিবন্ধকতা। অথচ এই বন্ধুর পথে অত্যন- সাবলীল ভাবে পথ চলেছেন মোসফিকুর রহমান।

সাংগঠনিক নির্বাহী ও অনির্বাহী পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ঃ

স্কাউটার মোঃ মোসফিকুর রহমান প্রশাসনিক ভাবে স'ানীয় স্কাউটস সহ-সম্পাদক ১৯৮১-৮৪, জেলা স্কাউটস সহ-সম্পাদক ১৯৮৪-৮৯, উপজেলা স্কাউটস সম্পাদক ১৯৮৫-৯৪, রাজশাহী আঞ্চলিক স্কাউটস প্রতিনিধি সদস্য ১৯৮৮-৯১, জেলা

স্কাউটস সহ-সম্পাদক ১৯৯১-৯৯, আঞ্চলিক উপ-কমিশনার (এক্‌্রটেনশন) রাজশাহী অঞ্চল ১৯৯৮-২০০১, আঞ্চলিক উপ-কমিশনার (বিধি) রাজশাহী অঞ্চল ২০০১-২০০৫, সদস্য, জনসংযোগ ও মার্কেটিং কমিটি, বাংলাদেশ স্কাউটস ২০০৬-২০০৮, জেলা স্কাউটস সম্পাদক ২০০১ থেকে এবং জুলাই, ২০০৮ হতে বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় উপ-কমিশনার (স্পেশাল ইভেন্টস) এবং বর্তমানে জাতীয় উপ-কমিশনার (জনসংযোগ ও মার্কেটিং) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্কাউটিং এর বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতার অধিকারী মোসফিকুর রহমান স্কাউটার, কন্টিনজেন্ট লিডার ও কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে অদ্যাবধি স'ানীয় ও আঞ্চলিক সকল সমাবেশ, ক্যাম্পুরীসহ ৬টি জাতীয় কাব ক্যাম্পুরী, ৮টি জাতীয় স্কাউট জাম্বুরী, প্রথম জাতীয় রোভার মুটসহ বেশ ক’টি রোভার মুট, সৃজনী ক্যাম্প, অ্যাগোনরী, কমডেকা, জাতীয় শতবর্ষ স্কাউট ক্যাম্প, জাম্বুরী অন দ্যা ট্রেন ও ৬ষ্ঠ সাফ স্কাউট ফ্রেন্ডশীপ ক্যাম্প বাস-বায়নে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, ওরিয়েন্টেশন কোর্স, ইন্দাবা ও মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম রাজশাহী আঞ্চলিক কাব ক্যাম্পুরীর আয়োজন ও বাস-বায়নে সক্রিয় অবদান রাখেন। ১৯৯১ সালে থেকে বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রশিক্ষণ টিমের সদস্য (সহকারী লিডার ট্রেনার) হিসেবে ১২ টি ইউনিট লিডার বেসিক ও এ্যাডভান্স কোর্সে প্রশিক্ষক এবং ১৩টি ইউনিট লিডার বেসিক কোর্সে কোর্স লিডারের দায়িত্ব পালন করেন।

সম্মানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত : উডব্যাজ (স্কাউট) - ১৯৮৫, উডব্যাজ (কাব) - ১৯৯৫, এ.এল.টি - ১৯৯১.

আন-র্জাতিক পর্যায়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৭তম বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরীতে তিনি বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের সহ-কন্টিনজেন্ট লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্কাউটিংয়ের সকল ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ধারাবাহিক অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ইতোপূর্বে ন্যাশনাল সার্টিফিকেট -১৯৮৭, মেডেল অব মেরিট -১৯৯৪, বার-টু-দি মেডেল অব মেরিট -২০০০, সি.এন.সি’জ অ্যাওয়ার্ড -২০০১ ও ২০০৮ সালে সভাপতি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

স্কাউটিংয়ের পাশাপাশি স্কাউটার মোসফিকুর রহমান সমাজসেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তিনি কার্যনির্বাহী সদস্য- নাটাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কার্যনির্বাহী সদস্য- নবাবগঞ্জ ক্লাব, সাধারণ পরিষদ সদস্য- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস'া, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি আজীবন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতি- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগার, জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রোগী কল্যাণ সমিতি- চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

উল্লেখ্য, তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কর্তৃক তিনবার জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিশু সংগঠন হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। তিনি একাধারে উপজেলা স্কাউটস এর দ্বিতল ভবন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল এর প্রতিষ্ঠাতা এবং চারতলা ভবন নির্মাণসহ সামপ্রতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাঁর শ্রমের ফল হিসেবে ও একজন সফল সংগঠক হিসেবে ইতোমধ্যে ১২ পি.এস তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন এবং বর্তমানে আরো পি.এস প্রাপ্তি প্রক্রিয়াধীন।

মোসফিকুর রহমানের নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদল আন-র্জাতিক পর্যায়ে ১৭তম ও ২০তম বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরীসহ বিভিন্ন জাম্বুরী ও মুটে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তমহাদলের বিভিন্ন নামে ২৬টি সচিত্র স্মরণিকা প্রকাশ, শিশু স্বাস'্য প্রকল্প পরিচালনা, ১৯৮৫ সালে স্কাউট (শিশু) পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, স্কাউটদের জন্য পূর্ণাঙ্গ সংগীত প্রশিক্ষনালয় ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প পরিচালনা করে আসছেন। তাঁর ইউনিটের দু’জন স্কাউটার পর্যায়ক্রমে ন্যাশনাল সার্টিফিকেট ও মেডেল অব মেরিট এবং কাব ও স্কাউট শাখায় বেশ কয়েকজন স্কাউটার উডব্যাজ পার্চমেন্ট অর্জন করেছেন।